Friday, September 27, 2019

বেরোবির সেশনজট ও আমার অভিমান (১৪ জানুয়ারি ২০১৫ তে লেখা)!


এর আগেও আশার বাণী শুনেছিলাম, জানিনা এবার কি হবে? বেরোবি'র সেশনজট নিয়ে প্রবন্ধ লিখলে যেমন হবে! (ভূমিকার সঙে উপসংহারের মিল থাকবে না) অতীব দুঃখ ও অভিমানের সাথে লিখছি, বেয়াদবীর জন্য অগ্রিম ক্ষমা চাচ্ছি।

প্রশ্ন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জটের উপাদানসমূহ বিশ্লেষণ করো। এর প্রভাব কি হতে পারে? তুমি কি মনে করো এই জট নিরসন সম্ভব?

উত্তর: ভূমিকা: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ অতিথি হলো সেশনজট। এই জট আমাদের নিত্যসঙ্গী বন্ধু এবং প্রেম, ডেটিং, বিশ্রাম এর সুবর্ণ ব্যবস্থা। এই জট ছাত্রজীবনকে দীর্ঘায়িত করে, পরীক্ষা পিছিয়ে যায়; ফলে জীবনে সুখী হওয়া যায় "ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকে পরীক্ষা"। নিম্নে যে সকল উপাদান এই সুখ বয়ে আনতে অবদান রাখে তা বিশ্লেষণ করা হলো।

উপাদানসমূহ: প্রধানত চার ধরনের উপাদান এই কাজে বিশেষ অবদান রাখে, যথা:
১. স্থায়ী/ নির্ধারিত সেশনজট
২. রাষ্ট্রীয় আর্শীবাদিত সেশনজট
৩. বোনাস সেশনজট
৪. দূর্ঘটনামূলক সেশনজট।

নিম্নে উপাদানসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. স্থায়ী সেশনজট: UGC এর বরাদ্দ মোতাবেক বেরোবি'তে প্রতিটি বিভাগে প্রতি বছর যে পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ হয়, যে পরিমাণ শিক্ষক অন্যত্র চলে যার এবং প্রতি বছর একটি করে নতুন Batch এলে যতটি নতুন কোর্স বিভাগের কার্যক্রমে যুক্ত হয় তার বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে এই সেশনজট যা নির্ধারিত/ বিদ্যমান অর্থাৎ '৬ মাসের সেমিস্টার ১ বছরে আর দুই বছরে ১ ইয়ার' তা তো অব্যাহত থাকবেই বরং প্রতিবছর এই হিসাবের সঙে ৫-১০% এক্সট্রা জট যুক্ত হবে যা কোনভাবেই সমাধান সম্ভব নয় যদি বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে কিছু পদক্ষেপ রাষ্ট্র/ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা না হয়।

২. রাষ্ট্রীয় আর্শীবাদিত সেশনজট: হরতাল, অবরোধ হলেই বেরোবি'তে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত থাকে। এটা বছরের একটা বিশেষ অংশ জুড়ে পরীক্ষা পেছাতে কাজ করে। যা বেরোবি'র সেশনজটে বিশেষ অবদান রাখে। গত এক বছরে এই খাত ২০-৩০% সেশনজট উপহার দিয়েছে।

৩. বোনাস সেশনজট: বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অন্তকোন্দল ও নিত্য নিত্য ছোট খাটো গন্ডগোলের কারনেও ক্লাস, পরীক্ষা স্থগিত থাকে। উল্লেখ্য, গন্ডগোল ছাড়া বেরোবি'তে একটি মাসও পার হয় না। এটা এতটাই ফলপ্রসূ যে এক শিফটের অন্তকোন্দল ছাত্রজীবনকে ১-৩ মাস পিছিয়ে দিতে পারে।

৪. দূর্ঘটনামূলক সেশনজট: বেরোবি'তে একে তো শিক্ষক সংকট এবং শিক্ষকদের উপর প্রচণ্ড দায়িত্বের চাপ, এই অবস্থায় একজন শিক্ষক অসুস্থ বা অনিবার্য কারণবসত তার কাজের ভার সময়মত সম্পন্ন করতে না পারলে তা সমাধানের আর কোন বিকল্প পথ থাকে না কারণ এখানে কেউ এটুকু ফ্রি সময় পায়না যে অন্যকে সাহায্য করবে। ফলে একটি দূর্ঘটনামূলক উপাদান সেশনজটে অবদান রাখে।

এসবের প্রভাব: এতসব কারণে এবং এসবের সমন্বিত প্রভাবে বেরোবি'র সেশনজট দিন দিন চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে চলেছে। সেশন জটের ফলস্বরূপ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা সন্তানরা হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না যে পড়াশুনা চালাবেন নাকি বাদ দিবেন, কারণ ছাত্রজীবন এখানে আনলিমিটেড, ৪ বছরের অনার্স যা হিসাবের কিন্তু তা শেষ করতে ৯-১১ বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে; অনুমান করাও সম্ভব নয় কত সময় লাগতে পারে! সরকারী চাকুরিতে যোগদানের বয়সই শেষ হয়ে যাবে তবুও পড়াশুনা শেষ হবে না।

ফলে যারা জীবনে সফল হতে চায় তারা জীবনে ব্যর্থ, যারা সত্যিকারে প্রেম করে তারা প্রেমে ব্যর্থ, সকল শিক্ষার্থী উদ্বিগ্ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ছোটবেলা 'সময়ের মূল্য' রচনাতে পড়েছি 'যারা সময়ের অপচয় করে করে তারা জীবনে উন্নতি করতে পারে না' এটি পড়া এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' এটিও এখানে ভুল।

জট নিরসন সম্ভব কি না: 'যদি' কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া না হয় এবং এই ভাবেই সব চলতে থাকে তবে জট নিরসন দূরে থাক জট আরও বাড়তে থাকবে এবং ডিজিটাল আদুভাই হতে হবে। বেরোবি'র অবস্থাই প্যারালাইজড হওয়া ব্যাক্তির মতো; এই অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে উঠে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ও আশা খুব ক্ষীণ।

উপসংহার: আমরা চাই সুন্দর শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই উত্তরবঙের শিক্ষার সমস্যা দূরীকরনের স্বার্থে এবং বেরোবি'র ছাত্রদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে রাষ্ট্র, সরকার, UGC, বেরোবি প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শিক্ষক, ছাত্র সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। আমরা চাই বেরোবি সুন্দর হোক।

No comments:

Post a Comment